নির্বাসনের দিনলিপি-০৭

[স্বেচ্ছায় সবার থেকে অন্তরালে যাপিত নির্বাসিত জীবনের বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো লিখে রাখার তাগিদেই এই ধারাবাহিক পোস্টের অবতারণা। কিছু এলোমেলো চিন্তা, লোকচক্ষুর আড়ালে কিভাবে কাটছে দিন, কি ভাবছি আমার জীবন নিয়ে ইত্যাদি টুকরো টুকরো নানা কথার ভান্ডার এই ধারাবাহিক। সম্পূর্ন ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার প্রকাশ এই পোস্টগুলো। অনেকটা ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা যেন। জীবনের একটা সময়ে গিয়ে এই পোস্টগুলো আমাকে হয়তোবা বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে জীবনের একটি কঠিন সময় পার করেছিলাম।]

জানুয়ারী ১৯, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ

অন্তিম ফয়সালার মুহূর্ত উপস্থিত। আর মাত্র কিছু ঘন্টার অপেক্ষা। আমার জীবনের বড় একটি অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। হতে পারে পরীক্ষায় উতরে স্বেচ্ছা গৃহবন্দীত্বের জীবন কাটিয়ে আবার ফিরতে পারবো মুক্ত বাতাসে, অথবা দীর্ঘায়িত হবে নির্বাসন। কোনটা ঘটার সম্ভাবনা বেশি সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। আমরা পরিস্থিতির হাতে বন্দী। পরিস্থিতিই নির্ধারণ করে দেয় জীবনের চলার পথ। বিগত ১২ বছর ধরে ক্রমাগত ঠোকর খেতে খেতে আর ব্যর্থতার করাল থাবায় জর্জরিত জীবনে এই উপলব্ধিটা ভালোভাবেই এসেছে। জানিনা এরপর কি ঘটবে, সবকিছুই ধোঁয়াটে, অনিশ্চয়তার একটা কালো চাদর দিয়ে ঢাকা পুরো জীবন।

প্রিয় শহর ঢাকা। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে এই শহরের পথ-ঘাটের সাথে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফটোওয়াক, উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি...ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে সেটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। মনে কষ্ট চেপে বসছে। ঢাকা আমার হোমটাউন নয়। কিন্তু নিজের হোমটাউন হিসেবে আমি সবসময় ঢাকাকেই মেনে এসেছি। এই শহরের প্রতি ভালোবাসা আমার জীবনেরই একটা অংশ। ভালোবাসার জিনিস ছেড়ে চলে যাওয়াটা তাই পীড়াদায়ক। যেখানে ফিরে যাচ্ছি সেটা নরক। স্বর্গ থেকে পতন ঘটছে আমার। অপেক্ষা করছে নরকের সীমাহীন কষ্ট আর ভোগান্তি। এই চরম দূর্দশার জীবন কতদিন বয়ে নিয়ে যেতে পারবো সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

হতে পারে এটাই আমার নির্বাসিত জীবনের শেষ পোস্ট। কিংবা দীর্ঘায়িত নির্বাসিত জীবনের আরেক নতুন কষ্টকর অধ্যায়ের সূচনা পর্ব। সময় অনেক কঠিন। নষ্ট বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাই সুসময়ের প্রত্যাশাই করতে পারি কেবল। যে সুসময় আমার জীবন থেকে বিগত ১২ বছর যাবত নির্বাসিত। আমি কি আবার সেটা ফিরে পাবোনা?

(চলবে)