নির্বাসনের দিনলিপি-০৩

[স্বেচ্ছায় সবার থেকে অন্তরালে যাপিত নির্বাসিত জীবনের বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো লিখে রাখার তাগিদেই এই ধারাবাহিক পোস্টের অবতারণা। কিছু এলোমেলো চিন্তা, লোকচক্ষুর আড়ালে কিভাবে কাটছে দিন, কি ভাবছি আমার জীবন নিয়ে ইত্যাদি টুকরো টুকরো নানা কথার ভান্ডার এই ধারাবাহিক। সম্পূর্ন ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার প্রকাশ এই পোস্টগুলো। অনেকটা ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা যেন। জীবনের একটা সময়ে গিয়ে এই পোস্টগুলো আমাকে হয়তোবা বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে জীবনের একটি কঠিন সময় পার করেছিলাম।]

জানুয়ারী ১১, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ

বাসায় বসে থেকে ক্রমাগত বিরক্তি ধরে গেছে। তাই বিকেলে একটু হাঁটতে বের হই। মানুষের ভিড়ে মিশে থাকি, পরিচিত মুখগুলোকে এড়িয়ে। শীতকালীন ফুটপাতের রাতের চিত্র আমাকে আকর্ষণ করে। শীতবস্ত্রের হকার, ফুচকা বিক্রেতা, কেনাকাটায় ব্যস্ত নিম্ন-আয়ের মানুষ - সবার মধ্যেই কেমন আলাদা একটা তাড়া, জীবনের সাথে চলমান সংগ্রামে লড়াইরত কিছু প্রাণী অথবা বস্তু। হাঁটতে হাঁটতে স্থানীয় থানার কাছাকাছি একটা গলিতে ঢুকে যাই। ঝুপড়ি এক দোকানে বসে টিমটিমে বাল্বের আলোয় সদ্য তেলেভাজা গরম পুরি আর সরিষার ঝোল গলাধঃকরণ করি। শীতের সন্ধ্যায় এই সামান্য খাবারটাই পরম তৃপ্তিদায়ক মনে হয়। সন্ধ্যার পর ঘনিয়ে আসা অন্ধকার রাতের সাথে আমার জীবনটাকে মেলানোর চেষ্টা করি।

সময় ঘনিয়ে আসছে। আমার জীবনের চূড়ান্ত এক পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি ক্রমশ। সময় কত দ্রুত ফুরিয়ে যায় সেটা ভাবছি। সময়কে যদি বেঁধে রাখা যেতো তাহলে আমি আমার কৈশোরের সময়টাকে চিরকালীনভাবে রেখে দিতাম। আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো তখনই পার করে এসেছি। যতই বয়স বেড়েছে ততই গ্লানি আর হতাশা জেঁকে বসেছে জীবনে। সেই সময়টা...যদি আবার ফিরে পাওয়া যেতো...

১১টা দিন কেটে গেছে নির্বাসিত জীবনে। এই ১১ দিনে কি পেলাম বা কি পেলাম না সেটার হিসাব কষতে বসাটা নেহায়েত সময়ের অপচয়। আগামীতে কি ঘটতে চলেছে সেটা নিয়েই চিন্তিত। আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু মানুষ, কাছের মানুষ। যারা চাইছে আবার আমি ফিরে আসি স্বাভাবিক জীবনে। এরা সংখ্যায় কম, তবুও এরাই আমার জীবনের কালো অন্ধকার সমুদ্রে জ্বলজ্বল করা জেলে নৌকার আলো।

(চলবে)