নির্বাসনের দিনলিপি-০১
[স্বেচ্ছায় সবার থেকে অন্তরালে যাপিত নির্বাসিত জীবনের বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো লিখে রাখার তাগিদেই এই ধারাবাহিক পোস্টের অবতারণা। কিছু এলোমেলো চিন্তা, লোকচক্ষুর আড়ালে কিভাবে কাটছে দিন, কি ভাবছি আমার জীবন নিয়ে ইত্যাদি টুকরো টুকরো নানা কথার ভান্ডার এই ধারাবাহিক। সম্পূর্ন ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার প্রকাশ এই পোস্টগুলো। অনেকটা ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা যেন। জীবনের একটা সময়ে গিয়ে এই পোস্টগুলো আমাকে হয়তোবা বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে জীবনের একটি কঠিন সময় পার করেছিলাম।]
ঢাকা, জানুয়ারী ৭, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ
আজ পরীক্ষা সমাপ্ত হলো। গত ৬ মাসের দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যয়নের চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষা এবার। মৌখিক পরীক্ষাটি আশানুরুপ হয়নি, তবে লিখিত পরীক্ষাটি চেষ্টা করেছি নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ভালো করতে। বাকিটা সময়ই বলে দিবে। ফলাফল প্রকাশে প্রায় সপ্তাহ দুয়েক বাকি। সময়টা কিভাবে কাটবে সেটা ভাবছি। পুরানো ক্লাসিক রক আর পপ গান শুনছি। ইউটিউবের কল্যানে ৮০ বা ৯০ এর দশকের গানগুলো আবার নতুন করে শোনা সহজ হয়ে গেছে। সেইসময়ের গানের উত্তেজনা আর আবেদনময় লিরিক্স এখনকার গানগুলোতে অনুপস্থিত। যথারীতি চার দেয়ালের কামরায় আবদ্ধ। বাইরের পৃথিবী দেখার জন্য একমাত্র উপায় মোটামুটি মাঝারি আকারের থাই গ্লাসের একটি জানালা। এটি দিয়ে বাইরের ইটপাথরে গড়া রুক্ষ শহর চোখে পড়ে। এই শহরের সাথে আমার জীবনের অনেকটা মিল খুঁজে পাই। ভিতরে ছন্নছাড়া, অথচ বাইরে কঠিন, রুঢ়।
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো আজকাল ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দুপুর নাগাদ প্রথম সূর্যের আঁচ পাই। ঢাকা শহরে আমার অভিজ্ঞতায় দেখা ২০১৩ সালের শীতকালটি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন ছিলো। ঐ বছরেই আমার ঢাকায় পদার্পণ। বিশেষভাবে মনে থাকবে সেই বছরটি।
একা বসবাসের অভ্যাসটা গড়ে তুলেছি অনেক আগে থেকেই। শুধু পরিবারের মানুষগুলো ছাড়া আজকাল কারো জন্য টান অনুভব করিনা। আমার তেমন কেউ নেইও। বন্ধু বা শুভাকাংখীর সংখ্যা অনেক কম। যারা আছে তাদের থেকেও দূরে আছি নির্বাসিত জীবনে। এই দূরত্ব কতদিনের সেটি অজানা। আজীবনের হলেও অবাক হবোনা। বাসা থেকে মা ফোন দেন। আমাকে নিয়ে উনার প্রচুর চিন্তা। ফোনে এক-দেড় ঘন্টা পর্যন্ত কথা চলে মাঝে মাঝে। সন্তানের বিপদে মায়ের মনই সবার আগে কাঁদে। আমার কষ্ট হয়। পরিবারের জন্য বেশি কিছু করতে না পারার কষ্ট। চাপা হতাশা বুকে চেপে বসে। অপেক্ষায় আছি টানেলের শেষমাথায় আলোর আভাস পাওয়ার জন্য। একটা মিরাকল দরকার, খুবই দরকার। অদ্ভুত কিছু ঘটুক। যে মিরাকলে ধুয়েমুছে যাবে আমার সব দুঃখ, বেদনা। আমার মা বিশ্বাসী। ঈশ্বরের উপর উনার অনেক বিশ্বাস। আমার সংশয়বাদী মন তাতে সায় দেয়না। আমাকে উনি বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেন। আমি পারিনা। বিশ্বাস অনেক কঠিন একটা বিষয়। নিজের মন থেকে বিশ্বাস না এলে কারো কথায় সেটা স্থাপন করা কঠিন। ঈশ্বর কি আসলেই আছেন? নাকি স্রেফ বায়বীয় একটি ধারনা? এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। হয়তোবা উত্তর মিলবে, কোন একদিন।
(চলবে)